ক্রোধ বা অপবাদে কখনোই ধাবিত না
নিঃস্পৃহ কিন্তু নির্বিকার নই অথচ যখন
ঘাসফড়িং আমাকে মৃত্যুর পরোয়ানা
শুনিয়েছিল প্রাচীন ঋষির ঔদ্ধত্যে
আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি তাকে
মৃত্যু বলে কিছু নেই—যা আছে তা
মৃত্যু-ভয় আর সেই ভয়ের দাফন
হয়েছে, আমাদের সতের আর
বাহাত্তরেও বাহাত্তর অকবলিত
মৃত্যুভয় উদাসীন
ফলত অমরত্ব সংক্রমিত হয়েছিল
আমাদের ভেতর, ভবিষ্যতের উৎসমুখে
দাঁড়িয়ে আমরা চড়া করেছি আমাদের
ঢাকের আওয়াজ, শাপ আর আশীর্বাদ
বধির কান আর অন্তর নিয়ে আমাদের
অতীত অসহায়ত্ব মহিমান্বিত হয়েছে
সদ্য জলাভূমি পার হওয়া গোড়ালি
থেকে কাদার আর শিশুদের চোখ থেকে
তখনও ঘুম আর অশ্রুর দাগ সূর্যোদয়ের
প্রতীক্ষায় যেন নক্ষত্র-নিয়ন্ত্রিত আত্মা
আমার হাতে নমরুদের নিক্ষিপ্ত বর্শা
পর্যাপ্ত মাছ না শিকারের অপরাধবোধ
সেই ভ্রমণ স্মরণ করেছি আমরা
আমাদের জীবন আর আলোর
আমাদের উদযাপন বিনীত হোক
লাগাম টেনেছি আসন্ন সময়ের
মৃত্যু আর অন্ধকার বলে কিছু নেই।
শতাব্দীর কোনো এক ক্ষণে যদি বা আমরা
তন্দ্রা-কাতর হয়েছি, আমরা যে ঘরে আশ্রয়
নিয়েছি, তা আমাদেরই বানানো, অক্ষয়
অধূলধূসরিত—আমাদের সাথে একই ছাদে
তোমাদের সন্তানেরা, আমাদের প্রাতরাশে
তোমাদের স্ত্রীরা আমাদের আর আমরা
তাদের আপ্যায়ন করেছি আন্তরিক ভব্যতায়
আপন বিলাসে আমাদের তামাক পুড়েছে
ভাতঘুমের আগে, নিভে গেছে নিজের ক্লান্তিতে
আমরা আমাদের পূর্ব আর উত্তরপুরুষের
সাথে বসেছি, নীরবতা বিনিময়ে আমরা
খুঁজিনি কত গাঢ় মিল আমাদের রক্তে
আমরা ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করেছি
সময়কে মেপেছি আমাদের মাপে
হাওয়ায় সওয়ার আমরা দুর্গম হিমালয় ঠেলে
দশদিক ঘুরে ফিরে এই উৎসমুখে ফেরাকে আমরা
সাব্যস্ত করেছি এক মুহূর্ত
অমরণকে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি
নিজেদের মূর্ত অস্তিত্ব যেন বা কদাকার
বর্বর, কিন্তু নিঃশর্ত সমর্পণ নয় এই প্রপঞ্চ
বরং স্বেচ্ছা মৃত্যু, আর মাকড়সার জালের মত
বিস্তারিত হব আমরা পৃথিবীর ভেতর
স্থির উষ্ণতা আর, বেঁচে থাকা মানবিক হৃদপিণ্ডই
আমাদের বিনিময়—যেহেতু এটাই যথেষ্ট অমরত্ব
ফারুক আব্দুল্লাহ, তিনি শক্তিমান লেখক। আমি তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠক।